
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন পর এই দুই শীর্ষ নেতার মুখোমুখি আলোচনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
বৈঠকের স্থান ও সময়
সূত্র বলছে, এই বৈঠকটি লন্ডনের একটি অভিজাত ব্যক্তিগত আবাসে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুই দলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রবাসী নেতাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি হয়েছিল প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী, যার সময়কাল ছিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে প্রধানত ছিল:
- আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় ও কৌশল নির্ধারণ।
- দেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণার যৌথ উদ্যোগ।
- বিএনপি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে জামায়াতের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রশ্ন।
- এক-দলীয় শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সম্ভাব্য রূপরেখা।
বৈঠকে উভয়পক্ষই তাদের অতীত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকর যোগাযোগ ও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতা দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসে রয়েছেন। এই বৈঠক এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। বিএনপি একাধারে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক ভবিষ্যতের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের ইঙ্গিত বহন করতে পারে। যদিও দুই দল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি, তবে এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতার পূর্বাভাস দেয়।
বিশ্লেষক ড. আবুল কাসেম বলেন, “বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে অতীতে জোট সরকার গঠনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বর্তমান সরকারবিরোধী প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে নতুন করে সমন্বয় বা সমঝোতা হতেই পারে।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না এলেও ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ধরনের গোপন বৈঠক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।” তবে তারা এ বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানান।