চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন যুগ: বে টার্মিনাল নির্মাণে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ  

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নির্মিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বে টার্মিনাল। এই টার্মিনালের নির্মাণকাজের প্রস্তুতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য:

  • নাম: বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প
  • অবস্থান: পতেঙ্গা উপকূল, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা
  • ব্যয়: প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা
  • টার্মিনালের সংখ্যা: ৩টি আধুনিক জেটি
  • মোট দৈর্ঘ্য: প্রায় ২,৫০০ মিটার
  • ড্রাফট: ১২ মিটার (বৃহৎ কন্টেইনার জাহাজ নোঙর করতে পারবে)

প্রকল্পের উদ্দেশ্য উপকারিতা:

চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২% পরিচালনা করে। কিন্তু বিদ্যমান জেটির সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে পণ্য খালাসে বিঘ্ন ঘটছে। বে টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে:

  • পণ্য খালাসের গতি বহুগুণে বাড়বে
  • বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে বন্দরে
  • বন্দরের সামগ্রিক পরিচালন ক্ষমতা প্রায় গুণ বৃদ্ধি পাবে
  • আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও মজবুত হবে

বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিনিয়োগ:

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (CPA)। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে পিপিপি (Public-Private Partnership) মডেলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া ইউরোপের কয়েকটি দেশ এই প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

নির্মাণ সময়সীমা:

বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যভাগে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ টার্মিনাল চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে একটিমাত্র টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে, যা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার পর বাকি অংশ ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে।

পরিবেশগত সামাজিক দিক:

বে টার্মিনাল প্রকল্পের সঙ্গে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ (ESIA) সম্পন্ন করা হয়েছে। উপকূলীয় পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পূনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও থাকবে।


উপসংহার:
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বে টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের সময়োপযোগী এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top