জাপানে বৈশ্বিক আয়োজনে ছড়াল বাংলা নববর্ষের রঙ

টোকিও, জাপান:
জাপানে অনুষ্ঠিত এক বিশ্ব প্রদর্শনীতে রঙিন সাংস্কৃতিক আয়োজনে উদ্‌যাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ছিল এক অনন্য সমাবেশ, যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার বহিঃপ্রকাশ ঘটল প্রাণবন্ত পরিবেশনার মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও দর্শনার্থীদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন হয়ে ওঠে এক উৎসবমুখর মিলনমেলা।


আয়োজনে ছিল কী কী?

স্থান: টোকিও আন্তর্জাতিক ফেস্টিভাল প্রাঙ্গণ
তারিখ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫
আয়োজক: বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও ও স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি

সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

  • লাল-সাদার রঙে রাঙানো মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় লোকগীতি, নৃত্য ও রবীন্দ্রসংগীত
  • শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় ছিল “এসো হে বৈশাখ” এবং “আমার সোনার বাংলা”
  • বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক গান ও লোকনৃত্য মুগ্ধ করে দর্শকদের

হস্তশিল্প পিঠা প্রদর্শনী

  • প্রদর্শনীর একাংশে রাখা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প—নকশিকাঁথা, পাটের ব্যাগ, মাটির তৈরি সামগ্রী
  • বাঙালি পিঠার স্টলে ছিল চিতই, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা ও নারিকেল নাড়ু
  • স্থানীয় জাপানি দর্শনার্থীরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন পিঠা তৈরির ওয়ার্কশপে

পহেলা বৈশাখের সাজে প্রবাসীরা

  • প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন আয়োজনে
  • নারীরা শাড়ি ও ফুলের গয়নায়, পুরুষেরা পাঞ্জাবিতে ফুটিয়ে তোলেন নববর্ষের সাজ
  • আয়োজনে ছিল আলপনা আঁকা, মুখে রঙ তোলা ও বৈশাখী মেলা ঘুরে দেখার আনন্দ

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ

বিশ্বের নানা দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন এ আয়োজনে।
অনেকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে ‘ম্যাজিকাল’ ও ‘রিচ ইন কালচার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

টোকিওর এক জাপানি দর্শনার্থী বলেন:
“বাংলাদেশের রঙ, গান, আর হাসিমুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন আমি ঢাকাতেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করছি!”


বাংলাদেশ দূতাবাসের বক্তব্য

রাষ্ট্রদূত শাহান আরা বেগম বলেন:

“এই আয়োজন শুধু নববর্ষ উদ্‌যাপন নয়, বরং এটি ছিল বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বদরবারে তুলে ধরার এক সুযোগ। আমরা গর্বিত যে, জাপানের মাটিতে এমন উজ্জ্বল ও হৃদয়গ্রাহীভাবে আমরা বৈশাখকে উদ্‌যাপন করতে পেরেছি।”


কমিউনিটির কণ্ঠে আনন্দ

“দেশ থেকে দূরে থেকেও এমন আয়োজন আমাদের হৃদয় জুড়িয়ে দেয়। বাচ্চাদের এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারাটা অনেক বড় প্রাপ্তি।” তানভীর আহমেদ, প্রবাসী বাংলাদেশি

“আমরা চাই প্রতিবছর এমন আয়োজন হোক। এটা আমাদের আত্মপরিচয় ও গর্বের প্রতীক।”
ফারহানা রহমান, স্থানীয় কমিউনিটি কর্মী


উপসংহার

বাংলা নববর্ষের এই উদ্‌যাপন শুধু উৎসব ছিল না—এটা ছিল পরিচয় তুলে ধরা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য খোঁজা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রাখার এক চমৎকার প্রয়াস। জাপানের মতো উন্নত দেশে এমন সাংস্কৃতিক সমাবেশে বাংলাদেশের প্রাণবন্ত উপস্থিতি বিশ্বকে জানিয়ে দিল বাংলা শুধু ভাষা নয়, এটি একটি জীবনধারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top