
গাজা সীমান্ত (১৫ এপ্রিল ২০২৫):
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরেজমিন পরিদর্শনে গাজা উপত্যকার কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন। সফরের সময় তিনি সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলেন, “হামাস এখনও শেষ হয়নি, এবং তাদের ওপর আরও আঘাত আসছে।”
এই সফর এমন এক সময় হলো যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত ফের নতুন মাত্রা পেয়েছে, এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা দূর হয়ে গেছে।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য:
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন:
“আমরা শেষ পর্যন্ত যাবো। যারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়, তাদের আমরা নির্মূল করব। হামাস এখনো আংশিকভাবে সক্রিয়, তবে তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে।”
“আমরা গাজা ছাড়ছি না যতক্ষণ না আমাদের সব লক্ষ্য অর্জিত হয়।”
তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার দক্ষিণ অংশে নতুন অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে, যেখানে ধারণা করা হচ্ছে হামাসের শীর্ষ নেতারা এখনো লুকিয়ে আছেন।
সামরিক প্রস্তুতি ও অভিযান:
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) সম্প্রতি গাজা সিটির উত্তরাংশ ও খান ইউনুস এলাকায় অভিযান বাড়িয়েছে। রাফাহ সীমান্ত এলাকায়ও সেনা জড়ো করা হয়েছে। সাম্প্রতিক ড্রোন ও বিমান হামলায় বহু জায়গা ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনও রয়েছে—যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
IDF-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা হামাসের অন্তত ১২টি টানেল ধ্বংস করেছে এবং বেশ কিছু কমান্ডারকে হত্যাও করেছে।
মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত, এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা থাকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বাড়ছে। জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“গাজায় এখন সবচেয়ে বড় সংকট খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা। নিরাপদ করিডোর এখনো নেই।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব লিগ নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পর সংঘাত প্রশমনে নতুন উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। তবে ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, হামাসকে নির্মূল না করে তারা কোনো শান্তিচুক্তিতে যাবে না।
বিশ্লেষক মন্তব্য:
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই সফর ছিল একপ্রকার রাজনৈতিক বার্তা ও শক্তি প্রদর্শন। তার সরকার ঘরে বাইরে চাপের মুখে থাকলেও সামরিক অবস্থানে কোনো শিথিলতা দেখাতে নারাজ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আরিয়েল বার-তাল বলেন
“নেতানিয়াহু এই সফরের মাধ্যমে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চেয়েছেন। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনসমর্থন বাড়াতে এটি একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।”
উপসংহার:
নেতানিয়াহুর গাজা সফর ও ‘আরও আঘাত’ হুঁশিয়ারি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়েছে। একদিকে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে গাজাবাসী, অন্যদিকে চরম প্রতিশোধপরায়ণ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি বা শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনা যেন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।