
ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫:
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন গতি আনতে এবং দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান চেয়ে পাকিস্তানের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে ঢাকা। তিনটি মূল ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশ বলেছে, পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ যুদ্ধকালীন সম্পদ ফেরত এবং আটকে থাকা নাগরিক সম্পত্তির নিষ্পত্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছে।
১. ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা
বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যেসব নির্মমতা চালিয়েছে, তা ইতিহাসে নৃশংসতার একটি জঘন্য অধ্যায়। আন্তর্জাতিক নানা মহল থেকেও একে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা না চাওয়া বাংলাদেশের জনগণের মনে গভীর ক্ষোভ ও কষ্টের কারণ হয়ে আছে। ঢাকা চায়, পাকিস্তান সরকার এক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করুক।
২. যুদ্ধকালীন সম্পদ ও সম্পত্তির ফেরত
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশি সম্পদের যথাযথ ফেরতের দাবি আবারও তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে রিজার্ভ ব্যাংকের জমাকৃত অর্থ, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিনিয়োগ, এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি, যা স্বাধীনতার পরও আজ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি।
৩. নাগরিক সম্পত্তি (Enemy Property) নিষ্পত্তি
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বাংলাদেশ ‘নাগরিক সম্পত্তি’ বা ‘এনিমি প্রপার্টি’ সমস্যার সমাধান চেয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়ে এবং তার পরবর্তী সময়ে অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তান তা দখল করে রাখে। এই সম্পত্তিগুলোর মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা।
কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট
এ সব বিষয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্ক চায়। তবে ইতিহাসের দায় এড়ানো যাবে না। সমাধানের জন্য খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতি সম্ভব।”
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যদি পাকিস্তান আন্তরিকতা দেখায় এবং এসব বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, তবে দুই দেশের মধ্যে নতুন এক কূটনৈতিক অধ্যায় শুরু হতে পারে।
উপসংহার
বাংলাদেশের এই বার্তা শুধু কূটনৈতিক নয়, এটি একটি নৈতিক ও ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। বাংলাদেশের জনগণ আশা করে, পাকিস্তান অতীতের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতের দিকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে।