
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় চলমান সহিংসতা, হামাসের সঙ্গে টানাপোড়েন, এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলজুড়ে বাড়ছে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানই চান। অথচ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজের অবস্থানে অনড়, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করছেন।
জনমত কী বলছে?
ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক Haaretz ও Channel 13 পরিচালিত যৌথ জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নাগরিক জানান, তারা গাজায় পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান বা নতুন করে লেবাননের হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলার পক্ষে নন।
তারা বিশ্বাস করেন, কূটনৈতিক চ্যানেল ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করা সম্ভব, এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য সেটিই বেশি কার্যকর।
একজন উত্তরদাতা বলেন, “যুদ্ধ কেবল আরেকটি যুদ্ধ ডেকে আনে। আমরা পরিবার হারিয়েছি, জীবন হারিয়েছি, কিন্তু শান্তি কখনোই পাইনি।“
নেতানিয়াহুর অবস্থান
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একাধিকবার বলেছেন, “ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিপন্ন হলে আমরা চুপ থাকতে পারি না। জাতীয় নিরাপত্তা সবার আগে।”
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তিচুক্তির আগে হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েল আর কোনো হুমকির মুখে না পড়ে।
নেতানিয়াহুর ভাষায়, “যে আগুন আমাদের ঘর পুড়িয়েছে, তাকে নিভানোর দায়িত্ব আমাদেরই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই যুদ্ধকেন্দ্রিক অবস্থান রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। দেশে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট, দুর্নীতি মামলার চাপ, এবং জনসমর্থনের ঘাটতি—এসব ঢাকতেই যুদ্ধের আবহ তৈরি করে নিজেকে “সাহসী নেতা” হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লিওর গারফিঙ্কেল বলেন,
“যখন কোনো সরকার জনসমর্থন হারায়, তখন ‘বাইরের শত্রু‘ দেখিয়ে জনগণের দৃষ্টি সরানো হয়। নেতানিয়াহু সেটাই করছেন। কিন্তু মানুষ এখন আগের মতো সহজে বিভ্রান্ত হয় না।“
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক আন্তর্জাতিক শক্তিই ইসরায়েলকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যুদ্ধের পরিবর্তে আলোচনার পথে এগোনো উচিত। তবে ইসরায়েল সরকার এখনও স্পষ্ট করে কোনো যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কথা জানায়নি।
শেষ কথা
ইসরায়েল বর্তমানে এক দ্বিধাজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে— জনগণ চাইছে শান্তি, অথচ সরকার এগোচ্ছে যুদ্ধের পথে। এই ব্যবধান যত বাড়বে, রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনাও তত গভীর হবে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—নেতানিয়াহু কী শোনেন: জনতার কণ্ঠ, নাকি যুদ্ধের দামামা?