
ঢাকা:
একাধিক হুমকি ও প্রতিবাদের মুখে বাতিল করা হয়েছিল ‘শেষের কবিতা’র পূর্বনির্ধারিত প্রদর্শনী। নাট্যপ্রেমীদের হতাশা ও সংস্কৃতি অঙ্গনের ক্ষোভের মাঝে বেশ কিছুদিন থমকে ছিল আয়োজন। তবে সব বাধা পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত নাটক ‘শেষের কবিতা’ অবশেষে নতুন আশার আলো নিয়ে আবারও মঞ্চে ফিরেছে।
প্রদর্শনী বাতিল: কী ঘটেছিল?
গত মাসে ঢাকার একটি প্রেক্ষাগৃহে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাতনামা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে হুমকি আসায় তা বাতিল করা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে।
নাট্যদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল
“আমরা কোনো সংঘর্ষ বা উত্তেজনার অংশ হতে চাইনি। তাই আপাতত প্রদর্শনী স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিই।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। নাটক, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে অনেকেই সরব হন।
ফিরে আসা: সাহসী এক প্রত্যাবর্তন
বাতিলের ঠিক তিন সপ্তাহ পর, রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে নতুন করে মঞ্চস্থ হয় ‘শেষের কবিতা’। এ প্রদর্শনীতে ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়, কড়া নিরাপত্তা এবং আবেগঘন পরিবেশ।
স্থান: জাতীয় নাট্যশালা, শিল্পকলা একাডেমি
তারিখ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫
উপস্থাপক দল: নাট্যনির্দেশক আরিফুল হক ও নাট্যদল ‘চেতনা’
নাটকটির মূল ভাবনা ও নির্মাণ
‘শেষের কবিতা’ রবীন্দ্রনাথের একটি চিরন্তন প্রেমের উপন্যাস, যেখানে লাবণ্য ও অমিতের মধ্যকার প্রেম, দার্শনিক মতবিনিময়, আত্মমর্যাদা ও আত্মত্যাগের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। মঞ্চনাটকের রূপে উপন্যাসটিকে রূপান্তর করা হয়েছে কিছুটা আধুনিক ভাষ্য ও মঞ্চ প্রয়োগে।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন:
- অমিত: আহমেদ তানভীর
- লাবণ্য: সোহানা সাবা
- ক্যাটরিনা: রাবেয়া রোজা
- বর্ণনায়: অভিনেতা সাদ আহমেদ
নাটকটির মঞ্চসজ্জা, আলোকব্যবস্থা ও সংগীতায়োজন দর্শকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছে।
নাট্যদলের প্রতিক্রিয়া
নাট্যনির্দেশক আরিফুল হক বলেন
“আমরা ভয় পাইনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের শিল্প-ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করা। কোনো হুমকি আমাদের থামাতে পারবে না।”
দলের একজন সদস্য জানান, তারা আরও ৫টি প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করেছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
প্রেক্ষাগৃহের বাইরে নাটক শেষে অনেক দর্শক চোখে জল নিয়ে বের হন।
একজন দর্শক বলেন-
“শেষের কবিতা তো শুধু প্রেমের গল্প নয়, এটি আত্মমর্যাদার প্রতীক। আজকের দিনে এই নাটকের ফিরে আসা নিজেই একটি বার্তা।”
আরেকজন বলেন-
“ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না যে বাংলাদেশ সংস্কৃতির দেশ। এই নাটক আমাদের সাহসের উদাহরণ।”
উপসংহার
‘শেষের কবিতা’ শুধু একটি নাটক নয়—এটি এখন এক প্রতীক, যেখানে সাহস, সংস্কৃতি ও সম্মান জড়িয়ে আছে একত্রে। হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নাট্যদল যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শিল্পকে রুখে দেওয়া যায় না, কারণ সত্য ও সৌন্দর্যের পথ অবরুদ্ধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চ আরও একবার প্রমাণ করল, তারা পিছু হটবে না।