
বলিউডের রাজা বলা হয় যাকে—শাহরুখ খান। যিনি হাতে গোনা কয়েকটি ব্যর্থতার মাঝেও গড়ে তুলেছেন অসাধারণ এক ক্যারিয়ার। তবে সাফল্যের মুকুটেও কিছু ‘কাজ না করার সিদ্ধান্ত’ জড়িয়ে আছে, যেগুলো শাহরুখ নেননি—আর পরে সেই সিনেমাগুলো হয়ে যায় সুপারহিট! কিছু সিনেমা আজ কিংবদন্তি, অথচ প্রথমে প্রস্তাব গিয়েছিল কিং খানের কাছেই। ভাগ্যের খেলা বলুন, নাকি সময়ের বিচিত্র ইশারা—তবে এটা ঠিক, শাহরুখের না বলা বহু সিনেমা আজও ইতিহাসের পাতায় ঝকমক করছে। চলুন জেনে নিই শাহরুখের না বলা সেই ১০ সুপারহিট সিনেমার গল্প:
১. মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস (2003)
প্রথমেই অবাক করা একটি তথ্য—রাজকুমার হিরানির এই কাল্ট ক্লাসিকের জন্য শাহরুখ খানই ছিলেন প্রথম পছন্দ! মুন্না ভাই চরিত্রে শাহরুখকে ভেবেছিলেন নির্মাতারা। কিন্তু সেই সময় শাহরুখ পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন এবং শিডিউল সমস্যার কারণে তিনি ছবিটি ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় দত্ত চরিত্রে অভিনয় করেন, আর ‘মুন্নাভাই’ হয়ে যান দর্শকের হৃদয়ের স্থায়ী বাসিন্দা।
ফলাফল: সুপারহিট, জাতীয় পুরস্কার জয়ী, কাল্ট ক্লাসিক
২. লগান (2001)
আমির খান অভিনীত “লগান” প্রথমে শাহরুখকে অফার করা হয়েছিল। পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর তখনও বড় মাপের নির্মাতা ছিলেন না। শাহরুখ স্ক্রিপ্ট পছন্দ করলেও সময়ের অভাবে ছবিটি করেননি। পরে আমির খান চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছবিটি বানান এবং বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমার তকমা পায় ‘লগান’।
ফলাফল: অস্কার মনোনীত, ব্লকবাস্টার
৩. স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (2008)
ড্যানি বয়েল পরিচালিত এই অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রের কুইজমাস্টার চরিত্রের জন্য প্রথমে প্রস্তাব ছিল শাহরুখ খানের কাছে। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন এই চরিত্র তার ইমেজের সঙ্গে মানাবে না, তাই তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে অনিল কাপুর চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান।
ফলাফল: ৮টি অস্কার জয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত
৪. থ্রি ইডিয়টস (2009)
রাজকুমার হিরানির “থ্রি ইডিয়টস”-এ রাঞ্চো চরিত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়েছিল শাহরুখ খানকে।
তবে আবারও শিডিউল এবং ভিশন সংক্রান্ত কিছু মতবিরোধের কারণে শাহরুখ সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়ান। আমির খান চরিত্রটি করেন এবং ছবিটি সর্বকালের অন্যতম বড় হিট হয়।
ফলাফল: ব্লকবাস্টার, সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমার তালিকায়
৫. জোধা আকবর (2008)
আশুতোষ গোয়ারিকরের ইতিহাসভিত্তিক রোম্যান্টিক মহাকাব্যের জন্য প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহরুখ।
তবে আবারও সময় ও স্ক্রিপ্ট নিয়ে কিছু দ্বিধা থাকায় তিনি এই প্রজেক্টে এগিয়ে যাননি। পরবর্তীতে হৃতিক রোশন দুর্দান্ত অভিনয় করে ‘আকবর’ চরিত্রে মুগ্ধ করেন দর্শকদের।
ফলাফল: সুপারহিট, ঐতিহাসিক রোমান্সের অনন্য উদাহরণ
৬. রং দে বসন্তী (2006)
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার পরিচালনায় ‘ডিজে’ চরিত্রটির জন্য প্রথমে শাহরুখের সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু শাহরুখ তখন “ডন” এবং “কাভি আলভিদা না কেহনা”-র কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমির খান চরিত্রটি করেন এবং ছবিটি একটি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।
ফলাফল: ব্লকবাস্টার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত
৭. কাহো না পেয়ার হ্যায় (2000)
হৃতিক রোশনের অভিষেক সিনেমা ছিল “কাহো না পেয়ার হ্যায়”। কিছু সূত্র মতে, প্রথমে বড় কোনো তারকা চরিত্রে চাওয়া হয়েছিল, এমনকি শাহরুখের দিকেও নজর ছিল নির্মাতাদের। কিন্তু শাহরুখের আগ্রহ না থাকায় রাকেশ রোশন ছেলেকে নিয়ে নতুন তারকা উপহার দেন—হৃতিক।
ফলাফল: সুপারহিট, নতুন সুপারস্টারের উত্থান
৮. এক থা টাইগার (2012)
কবীর খানের এই স্পাই থ্রিলারের জন্য প্রথম দিকের ভাবনায় শাহরুখের নাম ছিল। তবে তিনি সময় দেননি। পরে সালমান খান এসে চরিত্রটি নিয়ে বাজিমাত করেন।
ফলাফল: সুপারহিট, ৩০০ কোটি ক্লাবে প্রবেশ
৯. পদ্মাবত (2018)
ভানসালী প্রথমে ‘আলা উদ্দিন খিলজি’র চরিত্রের জন্য শাহরুখকে ভাবছিলেন। তবে শাহরুখের এই নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ ছিল না। শেষ পর্যন্ত রণবীর সিং চরিত্রে অভিনয় করে নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পারফরম্যান্স দেন।
ফলাফল: ব্লকবাস্টার, ঐতিহাসিক সিনেমার আইকন
১০. দিল ধড়কনে দো (2015)
জোয়া আখতারের এই মাল্টি-স্টার সিনেমায় ফারহান আখতারের চরিত্রটি প্রথমে শাহরুখকে অফার করা হয়েছিল। তবে শাহরুখের ব্যস্ততার কারণে তিনি করতে পারেননি। পরে ফারহান চরিত্রটি করেন এবং ছবিটি হয় সমালোচক ও দর্শকদের কাছে প্রশংসিত।
ফলাফল: সুপারহিট, স্টাইল ও পারিবারিক গল্পের অনন্য উপস্থাপনা
বিশ্লেষণ: কেন শাহরুখ এসব সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন?
শাহরুখ খানের সিদ্ধান্তগুলো মূলত তার ব্যক্তিগত পছন্দ, শিডিউল সমস্যা, বা ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য ছিল। সবসময়ই অভিনয়শিল্পীরা স্ক্রিপ্ট পড়ে তাদের নিজস্ব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া সে সময় শাহরুখের হাতে এমনিতেই বড় বড় সিনেমা ছিল—”কাভি খুশি কাভি গম”, “কাল হো না হো”, “ডন”, “রাবনে বনা দি জোড়ি”, “চক দে ইন্ডিয়া” ইত্যাদি। তবে অনেক সিনেমা সময়ের পরিবর্তনে কিংবদন্তি হয়ে দাঁড়ায়, যা আগে হয়তো এতটা প্রতিভাত ছিল না।
উপসংহার
শাহরুখ খান নিজেই বলেছেন, “আমি যা করেছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এবং যা মিস করেছি, তাতেও কোনো আফসোস নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য সঠিক পথ বেছে দেন।” এই বক্তব্যেই বোঝা যায়, শাহরুখ নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং আছেন। বলিউডের রাজত্বে কিছু ভুল সিদ্ধান্তও কিংবদন্তিদের জন্য একটা স্বাভাবিক ঘটনা। আর সত্যিই তো, শাহরুখ খান আজও ‘কিং খান’ হিসেবেই কোটি ভক্তের হৃদয়ে রাজত্ব করছেন!
10 movies that became superhits after Shah Rukh Khan said ‘no’