কাশ্মীরে হামলার ছবি দেখে ক্ষুব্ধ গোটা ভারত: মোদি

কাশ্মীরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর গোটা ভারত জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল ক্ষোভ ও শোকের আবহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “কাশ্মীরে হামলার ছবি দেখে ক্ষুব্ধ গোটা ভারত। আমরা এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেব।”

ঘটনার পর থেকে কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার। সর্বস্তরের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র একটাই স্লোগান— “শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।”

হামলার বিবরণ

হামলা হয়েছে কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার কাছে। একটি সামরিক কনভয়কে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে এই হামলা। জানা গেছে, আইইডি বিস্ফোরণের মাধ্যমে কনভয়ের একটি বড় অংশ ধ্বংস করা হয়। হামলার পরপরই দৃশ্যটি বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিধ্বস্ত গাড়ি, রক্তাক্ত সেনারা, আর চারপাশের ধ্বংসস্তূপের ছবি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেয়।

হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন এবং অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার দায় স্বীকার করেছে একটি কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন:

“ভারতের সেনারা আমাদের গর্ব। যারা এভাবে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে, তারা শাস্তি পাবেই। শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না। গোটা দেশ আজ শোকাহত, কিন্তু আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ়।”

মোদি আরও জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ভারত নিজের সমস্ত সামর্থ্য প্রয়োগ করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসের মদদদাতাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

সর্বস্তরের প্রতিক্রিয়া

শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ নেতারাও এই হামলার কঠোর নিন্দা করেছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে সর্বদলীয় নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া:

  • কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণভাবে সরকারের পাশে আছি। এই হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।”
  • বিজেপি নেতৃত্ব বলেন, “দেশ এখন প্রতিশোধের মুডে রয়েছে। আমাদের সহ্যের সীমা ফুরিয়ে গেছে।”
  • বাম দল এবং অন্যান্য বিরোধী দলও সর্বসম্মতভাবে হামলার নিন্দা জানায় এবং জাতীয় সংহতির ডাক দেয়।

সাধারণ মানুষের আবেগ

দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও ক্যান্ডেল মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় #PulwamaAttack, #SaluteOurMartyrs, #IndiaStrikesBack হ্যাশট্যাগে লক্ষ লক্ষ পোস্ট হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকারাও শহীদদের জন্য শোকপ্রকাশ ও ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে।

ভারতের স্কুল-কলেজগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে শহীদদের স্মরণে। অনেক জায়গায় সাধারণ জনগণ অর্থসাহায্য জমা করছে শহীদ পরিবারের জন্য।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাশ্মীরের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও কঠোর বিবৃতি এসেছে। পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও।

পাকিস্তানের ভূমিকা ও ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ

হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে বিশ্বমঞ্চে একঘরে করার প্রচেষ্টা শুরু করে ভারত। এরই অংশ হিসেবে পাকিস্তান থেকে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা হয় এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের তলব করে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়।

ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি তোলে, যেন সন্ত্রাসবাদকে মদদ দেওয়া দেশের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জাতিসংঘে এই হামলার বিষয়ে একটি কঠোর প্রস্তাব তোলার পরিকল্পনাও চলছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত কেবল কূটনৈতিক নয়, সামরিক প্রতিক্রিয়াও বিবেচনা করছে। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো অভিযান আবারও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, “সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সময়, স্থান ও পদ্ধতি— সবকিছু তারা নির্ধারণ করবে।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সামরিক প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন। সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ পরিবারদের পাশে দেশ

প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার পক্ষ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে চাকরির প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। বিভিন্ন রাজ্যের জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে সাহায্য নিয়ে।

দেশের জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও, যেমন অভিনেতা অক্ষয় কুমার, সচিন তেন্ডুলকরসহ অনেকে শহীদ পরিবারদের সাহায্যের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করেছেন।

সমাপ্তি

কাশ্মীরে এই নির্মম সন্ত্রাসী হামলা ভারতের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ভারত এমন কঠিন সময়েও বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির কথায়, এই হামলা ভারতীয় জাতির মনোবলকে দমন করতে পারবে না, বরং আরও শক্তিশালী করবে।

গোটা দেশ আজ শহীদদের জন্য কাঁদছে, প্রতিজ্ঞা করছে প্রতিশোধের। ক্ষুব্ধ ভারত অপেক্ষা করছে উপযুক্ত জবাবের, যখন ন্যায়বিচারের ধ্বনি ধ্বনিত হবে কাশ্মীরের উপত্যকা থেকে গোটা বিশ্বমঞ্চে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top