
২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, ইসরাইলের জাতীয় স্মরণ দিবসে, জেরুজালেমের উপকণ্ঠে এস্টাওল ও লাত্রুন এলাকার মধ্যে ভয়াবহ দাবানল শুরু হয়। এই দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ২০,০০০ ডুনাম (প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার) এলাকা পুড়ে যায়, যার মধ্যে ১৩,০০০ ডুনাম বনাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত।
জরুরি অবস্থা ও উদ্ধার কার্যক্রম
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতিকে “জাতীয় জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেন। তিনি সতর্ক করেন যে, বাতাসের গতি ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন জেরুজালেম শহরের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরাইলের ফায়ার সার্ভিস ১৬৩টি গ্রাউন্ড ক্রু ও ১২টি বিমান মোতায়েন করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) সহায়তা প্রদান করে, যার মধ্যে ছিল ৫০টি ফায়ার ইঞ্জিন, সার্চ ও রেসকিউ টিম, এবং ৩০০,০০০ লিটার পানি সরবরাহ।
ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাব
এই দাবানলে অন্তত ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের মধ্যে দুইজন গর্ভবতী নারী ও দুইটি শিশু রয়েছে। আরও ১০ জনকে ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় ৭,০০০ বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। দাবানলের কারণে জেরুজালেম ও তেল আবিব সংযোগকারী প্রধান হাইওয়ে ১, হাইওয়ে ৩, ৪২৪, ৪৪৪ এবং ৪৪ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া, জেরুজালেম ও মোদিইন সংযোগকারী ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক সহায়তা
ইসরাইল আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানায়, যার ফলে ইতালি, ক্রোয়েশিয়া, স্পেন, ফ্রান্স, ইউক্রেন, রোমানিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং সাইপ্রাস থেকে ফায়ারফাইটিং বিমান পাঠানো হয়।
দাবানলের কারণ ও তদন্ত
দাবানলের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে শুষ্ক আবহাওয়া, উচ্চ তাপমাত্রা এবং শক্তিশালী বাতাসকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে, ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগের সন্দেহে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিবেশগত প্রভাব
দাবানলের ফলে জেরুজালেমের বায়ু মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছে যায়। IQAir রিপোর্ট করে যে, শহরের বায়ু মান অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে ছিল।
জাতীয় অনুষ্ঠান ও জনজীবনে প্রভাব
দাবানলের কারণে ইসরাইলের স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়, যার মধ্যে জেরুজালেম, তেল আবিব, আশকেলন, মোদিইন, বিয়ারশেবা, মেভাসেরেত জিওন, লোদ, আরিয়েল, মা’আলে আদুমিম এবং কিরিয়াত ওনো অন্তর্ভুক্ত। মাউন্ট হার্জেলে বার্ষিক টর্চ-লাইটিং অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়।
উপসংহার
ইসরাইলে এই দাবানল দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এই দুর্যোগের জন্য দায়ী হতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।