
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে করিডর ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে, করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে আসা উচিত। তার এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
করিডর ইস্যু: পটভূমি ও গুরুত্ব
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে বিবেচিত। ভারত, চীন, মিয়ানমার এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে। এই করিডর ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সংযোগের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে, এই করিডর ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের স্বার্থের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তারেক রহমানের বক্তব্যের সারাংশ
তারেক রহমান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, করিডর দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না হলে কোনো খাতে সংস্কার সম্ভব নয়” । তার এই বক্তব্যে তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব এবং জনগণের অংশগ্রহণের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন।
গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকারের ভূমিকা
তারেক রহমানের বক্তব্যে গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান হিসেবে নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি মনে করেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে বেছে নেওয়া সরকারই দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত । এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, করিডর ইস্যুর মতো জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি বৈধ ও নির্বাচিত সরকারের উপস্থিতি অপরিহার্য।
জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব
তারেক রহমান ভবিষ্যতে একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশগ্রহণকারীরা দেশের পরিচালনায় অংশ নেবেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ প্রথম দিন থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ে” । এছাড়া, তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থাকা জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিরাও সংসদে অবদান রাখতে পারেন।
করিডর সিদ্ধান্তে সংসদের ভূমিকা
করিডর ইস্যুতে সংসদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারেক রহমানের মতে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা এবং জনগণের মতামত গ্রহণ করা উচিত। তিনি মনে করেন, একটি নির্বাচিত সংসদই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
তারেক রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সরকারপক্ষ তার বক্তব্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে, যেখানে বিরোধীদলীয় নেতারা তার বক্তব্যকে গণতন্ত্রের পক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান হিসেবে দেখছেন। এই বিতর্ক দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি
সাধারণ জনগণের মধ্যে করিডর ইস্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করেন, করিডর ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। অন্যদিকে, অনেকেই জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সতর্কতা অবলম্বনের পক্ষে। তারেক রহমানের বক্তব্য এই বিতর্কে নতুন আলো ফেলেছে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
উপসংহার
করিডর ইস্যুতে তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তার বক্তব্যে তিনি নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব, সংসদের ভূমিকা এবং জনগণের অংশগ্রহণের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।