
গুরুতর অসুস্থতা ও দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী সোমবার (৫ মে) দেশে ফিরছেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র সরাসরি সহায়তায় অত্যাধুনিক একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে।
চিকিৎসাজনিত প্রেক্ষাপট
খালেদা জিয়া বিগত কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালের শেষ দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে, পারিবারিক সিদ্ধান্ত ও দলীয় পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দোহা, কাতারে পাঠানো হয়।
দোহায় একটি বেসরকারি মেডিকেল সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়, যেখানে কাতার, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল তার চিকিৎসা পরিচালনা করেন। চিকিৎসকেরা জানান, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বয়সজনিত কারণে দীর্ঘমেয়াদে তাকে পূর্ণ সুস্থতা দিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া কিছু চিকিৎসা বাংলাদেশেও নিয়মিত ফলোআপের মাধ্যমে করা সম্ভব।
কাতারের ভূমিকা ও কূটনৈতিক বার্তা
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য কাতারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা প্রদর্শন করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ব্যক্তিগতভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সমস্ত খরচ বহনের নির্দেশ দেন। তার এমন পদক্ষেপ শুধু একটি মানবিক সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং বাংলাদেশ-কাতার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন মাত্রারও সূচনা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সহায়তা কাতারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রতি একটি কৌশলগত বার্তা। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাতার বেশ সচেতনভাবে কিছু মানবিক কূটনীতি পরিচালনা করে আসছে। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তা আরও সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হলো।
রাজনৈতিক প্রভাব ও জল্পনা
বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা তার প্রত্যাবর্তনকে দলের মনোবল বৃদ্ধির অন্যতম উৎস হিসেবে দেখছেন। যদিও খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় নন এবং তার ওপর কিছু আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তথাপি তার উপস্থিতি রাজনৈতিক সমীকরণে প্রতীকী ও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
বিএনপি সূত্র জানায়, দেশে ফেরার পর খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের বাসভবন “ফিরোজা”তেই রাখা হবে। সেখানে তাকে মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখবে। দলীয়ভাবে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারি পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য না আসলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকায় তার আগমনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয় ও প্রশ্ন
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা কেবল একটি চিকিৎসাজনিত সিদ্ধান্ত নয়—এটি রাজনৈতিক বার্তা ও সম্ভাবনারও প্রতীক। প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি এখনো ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন? নাকি শুধুই দলের অভ্যন্তরীণ নৈতিক শক্তি হিসেবে থাকবেন? বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই মনে করেন, খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজনৈতিক ও আইনি দিক বিবেচনায় তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা এখনো অনিশ্চিত।
উপসংহার:
বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা শুধুই একটি ব্যক্তিগত বা চিকিৎসাজনিত ঘটনা নয়। এটি কূটনৈতিক মানবিকতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও জাতীয় আলোচনার একত্র মিশ্রণ। আগামী সপ্তাহগুলোতে তার উপস্থিতি দেশের রাজনৈতিক আবহে নতুন আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবে বলেই ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।