
ভারতে ডায়াবেটিসের একটি নতুন রূপ ‘মোডি’ (MODY) ধীরে ধীরে শিশুদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এটি একটি জেনেটিক বা বংশগত ডায়াবেটিস, যা সাধারণত ২৫ বছরের নিচে বয়সে প্রকাশ পায় এবং প্রায়ই টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়।
🧬 মোডি (MODY) কী?
মোডি (Maturity-Onset Diabetes of the Young) হলো এক ধরনের মনোজেনিক ডায়াবেটিস, যা একটি নির্দিষ্ট জিনের ত্রুটির কারণে হয়। এটি অটোসোমাল ডমিন্যান্ট পদ্ধতিতে বংশগতভাবে ছড়ায়, অর্থাৎ একজন অভিভাবকের মোডি থাকলে সন্তানের ৫০% সম্ভাবনা থাকে এটি পাওয়ার। এখন পর্যন্ত ১৩টি সাবটাইপ চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে HNF1A, HNF4A এবং GCK জিনের ত্রুটি সবচেয়ে সাধারণ।
🇮🇳 ভারতে মোডির প্রভাব
ভারতে মোডি ডায়াবেটিসের প্রকৃত পরিসংখ্যান নির্ধারণ কঠিন, কারণ এটি প্রায়ই টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ১-৫% এবং শিশুদের মধ্যে ১-৬% মোডিতে আক্রান্ত হতে পারে । ভারতের কিছু অঞ্চলে আত্মীয়বিবাহের উচ্চ হার এবং জেনেটিক বৈচিত্র্যের কারণে মোডির প্রকোপ বেশি হতে পারে।
👶 শিশুদের মধ্যে মোডির লক্ষণ
- ২৫ বছরের নিচে ডায়াবেটিসের প্রকাশ
- পরিবারে একাধিক প্রজন্মে ডায়াবেটিসের ইতিহাস
- ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা কম বা নেই
- টাইপ ১ ডায়াবেটিসের অটোইমিউন মার্কার অনুপস্থিত
এই লক্ষণগুলো থাকলে শিশুর মোডি ডায়াবেটিস হতে পারে।
🧪 সঠিক নির্ণয়ের গুরুত্ব
মোডি ডায়াবেটিসের সঠিক নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো নয়। সঠিক জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে মোডি শনাক্ত করা যায়, যা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু মোডি রোগী ইনসুলিনের পরিবর্তে ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিক ওষুধে ভালো সাড়া দেয় ।
🛡️ করণীয়
- জেনেটিক কাউন্সেলিং: পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে জেনেটিক পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- সঠিক নির্ণয়: টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ থাকলেও, মোডির সম্ভাবনা বিবেচনা করে জেনেটিক পরীক্ষা করানো উচিত।
- চিকিৎসা পরিকল্পনা: সঠিক নির্ণয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা যায়।
- পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা: মোডি শনাক্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও পরীক্ষা করানো উচিত।
🔚 উপসংহার
ভারতে মোডি ডায়াবেটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। সঠিক সচেতনতা, নির্ণয় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনে জেনেটিক পরীক্ষা করানো।