কুষ্টিয়ায় ঘুরে দেখার মতো ৫টি দর্শনীয় স্থান – ভ্রমণপিয়াসুদের জন্য পরিপূর্ণ গাইড

বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কুষ্টিয়া জেলা শুধু শিল্পসাহিত্যেই নয়, ভ্রমণপ্রেমীদের জন্যও এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র। এখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে একাধিক দর্শনীয় স্থান। আপনি যদি একটি ছোট্ট ট্রিপে মন ও দৃষ্টি জয় করতে চান, তাহলে কুষ্টিয়া হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।

এই গাইডে তুলে ধরা হলো কুষ্টিয়ার ৫টি সেরা ঘোরার জায়গা, যা আপনাকে দেবে এক অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।


১. শিলাইদহ কুঠিবাড়ি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্য

লোকেশন: কুমারখালী উপজেলা, শিলাইদহ গ্রাম
প্রধান আকর্ষণ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতবাড়ি, জাদুঘর, পদ্মার পাড়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়েছে এই কুঠিবাড়িকে ঘিরে। এখানেই বসে তিনি লিখেছেন ‘গীতাঞ্জলি’, ‘ছিন্নপত্র’সহ বহু কালজয়ী সাহিত্যকর্ম। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, যেখানে কবির ব্যবহৃত আসবাবপত্র, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও ছবি সংরক্ষিত আছে।

কেন যাবেন:

  • সাহিত্যের প্রাণস্পর্শী ইতিহাস জানার সুযোগ
  • পদ্মার তীরবর্তী মনোরম পরিবেশ
  • ছুটি কাটানোর জন্য নিরিবিলি ও শিক্ষণীয় স্থান

২. লালন শাহের মাজার ও আখড়াবাড়ি – বাউল সাধনার কেন্দ্র

লোকেশন: ছেঁউড়িয়া, কুষ্টিয়া সদর
প্রধান আকর্ষণ: লালনের সমাধি, বাউল আখড়াবাড়ি, বার্ষিক লালন মেলা

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাঁর দর্শন ও গান আজও বাংলার আনাচে-কানাচে প্রতিধ্বনিত হয়। লালনের মাজার প্রাঙ্গণে নির্মিত আখড়াবাড়িতে নিয়মিত বাউল গানের আসর বসে। প্রতিবছর দোল পূর্ণিমা ও কার্তিক মাসে লক্ষ ভক্ত এখানে সমবেত হন।

কেন যাবেন:

  • বাউল সংগীত ও আধ্যাত্মিক চর্চার কেন্দ্র
  • বাংলার লোকসংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন
  • ফকির লালনের জীবন ও দর্শনকে কাছ থেকে জানার সুযোগ

৩. হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু – ইতিহাস ও আধুনিকতার যুগলবন্দী

লোকেশন: ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া সড়কে পদ্মা নদীর ওপর
প্রধান আকর্ষণ: ঐতিহাসিক রেলসেতু ও আধুনিক সড়কসেতু

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি রেলওয়ে সেতু, যা আজও চালু রয়েছে। পাশে নির্মিত লালন শাহ সেতু আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতীক। এ দুটি সেতু একসাথে দেখলে ইতিহাস ও আধুনিকতার অপূর্ব মিল খুঁজে পাবেন।

কেন যাবেন:

  • নদী ও সেতুপ্রেমীদের জন্য চমৎকার ফটোস্পট
  • স্নিগ্ধ পদ্মা নদীর দৃশ্য উপভোগ
  • সূর্যাস্তের অসাধারণ দৃশ্য দেখতে চাইলে এটি আদর্শ

৪. মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা – সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য বিশেষ স্থান

লোকেশন: লাহিনীপাড়া, কুষ্টিয়া শহরের উপকণ্ঠ
প্রধান আকর্ষণ: ‘বিষাদ সিন্ধু’ লেখকের স্মৃতিরক্ষা কেন্দ্র

মীর মশাররফ হোসেন বাংলা মুসলিম সাহিত্যের একজন অগ্রদূত। তাঁর জন্মভিটায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি পাঠাগার, জাদুঘর ও মিলনায়তন। এখানে তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ব্যবহৃত সামগ্রী ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জানা যায়।

কেন যাবেন:

  • বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ঘেঁটে দেখার সুযোগ
  • শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার কেন্দ্র
  • সাহিত্যিক পরিবেশে সময় কাটানোর অপূর্ব সুযোগ

৫. আমলাপাড়া জমিদার বাড়ি – কুষ্টিয়ার ইতিহাসের নীরব সাক্ষী

লোকেশন: খোকসা উপজেলা, আমলাপাড়া গ্রাম
প্রধান আকর্ষণ: শতবর্ষ পুরোনো জমিদার বাড়ির স্থাপত্য

ব্রিটিশ শাসনামলে গড়ে ওঠা এই জমিদার বাড়িটি কুষ্টিয়ার অন্যতম পুরাতন স্থাপনা। সেখানকার স্থাপত্যশৈলী, বিশাল আঙিনা ও প্রাচীন কাহিনীগুলো কৌতূহলী ভ্রমণকারীদের কাছে দারুণ এক আকর্ষণ।

কেন যাবেন:

  • ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহীদের জন্য উপযুক্ত
  • শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ
  • প্রাচীন বাংলার সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ

ভ্রমণের জন্য কিছু টিপস

  • কুষ্টিয়ায় অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া সবচেয়ে মনোরম থাকে।
  • ছেঁউড়িয়ায় লালন মেলা চলাকালীন ভীড় এড়াতে আগেভাগেই বুকিং করে রাখুন।
  • শিলাইদহ, লাহিনীপাড়া এবং ছেঁউড়িয়া একই দিনে ঘোরা সম্ভব।

উপসংহার

কুষ্টিয়া শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতির জেলা নয়, এটি এক অনন্য ভ্রমণ গন্তব্য। এখানে একদিনের ট্যুর হোক কিংবা দু’দিনের পারিবারিক সফর—এই ৫টি দর্শনীয় স্থান আপনার হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাই এবার ঘোরার পরিকল্পনায় কুষ্টিয়াকে রাখুন তালিকার উপরের দিকেই!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top