নবজাতকের গোড়ালির রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়বে ভবিষ্যতের জটিল রোগ

নবজাতক জন্ম নেওয়ার পরপরই করা একটি সাধারণ পরীক্ষা—গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা (Heel Prick Test)—আজ শুধু একটি রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা নয়, হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের চিকিৎসার চাবিকাঠি। আধুনিক জেনেটিক প্রযুক্তি এবং বায়োমার্কার শনাক্তকরণ পদ্ধতির অগ্রগতির ফলে এখন এই পরীক্ষার মাধ্যমে শতাধিক জটিল বংশগত রোগ আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।


🧪 গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা কী?

গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা বা Newborn Screening Test হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শিশুর গোড়ালি থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত নিয়ে বিশেষ পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়। এটি নবজাতকের জন্মের ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা হয়।

এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য:

  • শিশুর শরীরে কোনো জেনেটিক বা বিপাকজনিত সমস্যা আছে কি না তা আগেই শনাক্ত করা
  • প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করার সুযোগ তৈরি করা
  • ভবিষ্যতের জটিলতা কমানো বা প্রতিরোধ করা

🧬 কোন কোন রোগ ধরা পড়ে?

নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে এখন এক ফোঁটা রক্তে ১০০টিরও বেশি রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে:

  • থ্যালাসেমিয়া
  • সিস্টিক ফাইব্রোসিস
  • কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম
  • ফেনাইলকিটোনুরিয়া (PKU)
  • হোমোসিস্টিনুরিয়া
  • স্কিড (Severe Combined Immunodeficiency)
  • মাপেবল নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজঅর্ডার
  • বিভিন্ন মেটাবলিক ডিজঅর্ডার

👉 এইসব রোগ যদি শিশুর জন্মের পরপরই ধরা পড়ে, তবে সময়মতো চিকিৎসা দিয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।


🌍 কোন কোন দেশে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক?

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এই পরীক্ষাটি নবজাতকের জন্য বাধ্যতামূলক। যেমন:

  • যুক্তরাষ্ট্র: ৫০টি রাজ্যেই বাধ্যতামূলক, সাধারণত ৩০ থেকে ৫০টি রোগের জন্য পরীক্ষা করা হয়
  • যুক্তরাজ্য: NHS-এর অধীনে ৯টি রোগ পরীক্ষা করা হয়
  • অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান-সহ আরও অনেক দেশে পরীক্ষাটি নিয়মিতভাবে করা হয়

🇧🇩 বাংলাদেশে কি এই পরীক্ষা হয়?

বাংলাদেশে নবজাতকের গোড়ালির রক্ত পরীক্ষার সচেতনতা এখনো তুলনামূলকভাবে কম। তবে ঢাকার কিছু আধুনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এটি সীমিতভাবে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে:
এই পরীক্ষাটি সারাদেশে সরকারিভাবে চালু হলে নবজাতকের মৃত্যুহার ও প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।


কেন জরুরি এই পরীক্ষাটি?

  1. আগাম রোগ শনাক্তকরণ: শিশুর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়
  2. চিকিৎসা শুরু করা যায় শুরুর আগেই: অনেক রোগের ক্ষেত্রে আগাম চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে
  3. পরিবারের মানসিক স্বস্তি: ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়
  4. জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো সম্ভব

🧑⚕️ চিকিৎসকদের পরামর্শ

ঢাকার একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন:

“এই পরীক্ষা সবার জন্য সহজলভ্য হলে আমাদের দেশে প্রতিবন্ধিতা ও শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।”


📌 উপসংহার

একটি সাধারণ গোড়ালির রক্ত পরীক্ষা দিয়ে শিশুর ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি আগেভাগেই চিহ্নিত করা সম্ভব—এটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বড় অগ্রগতি। বাংলাদেশে এই বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিতভাবে পরীক্ষাটি চালু করাই এখন সময়ের দাবি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top