
হার্ট বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে সার্জারির প্রয়োজন অনেক সময়ই হয়। করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG), ভালভ রিপ্লেসমেন্ট, বা ওপেন হার্ট সার্জারি — এসব বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বহু মানুষ নতুন জীবন ফিরে পান। কিন্তু এই সার্জারিগুলোর পরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, বিশেষ করে কিডনি, ঝুঁকিতে পড়তে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় Acute Kidney Injury (AKI) বা তীব্র কিডনি জটিলতা।
কেন কিডনির সমস্যা দেখা দেয়?
হার্ট সার্জারির সময় ও পরে বেশ কয়েকটি কারণে কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হল:
১. রক্তচাপ ও রক্তপ্রবাহের পরিবর্তন
হার্ট সার্জারির সময় শরীরে কৃত্রিমভাবে রক্ত চলাচল বজায় রাখতে হয়। এটি অনেক সময় কিডনিতে যথেষ্ট রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে, যার ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. অক্সিজেনের ঘাটতি
অস্ত্রোপচারের সময় বা পরে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে কিডনির কোষগুলো আক্রান্ত হতে পারে। এটি বিশেষভাবে প্রবীণদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে।
৩. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সার্জারির সময় বা পরবর্তী চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক, বেদনানাশক ও ডায়ুরেটিক ওষুধ অনেক সময় কিডনির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৪. রক্তপাত ও ইনফেকশন
বেশি রক্তপাত বা ইনফেকশন হলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়, যা কিডনিকে আক্রান্ত করতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
হার্ট সার্জারির পর কিডনি জটিলতার সম্ভাবনা নির্ভর করে রোগীর কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার উপর। যেমন:
- বয়স ৬০ বছরের উপরে
- আগে থেকে কিডনি সমস্যা থাকলে
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
- ধূমপানের অভ্যাস থাকলে
লক্ষণ যেগুলো খেয়াল রাখতে হবে
হার্ট সার্জারির পর যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:
- প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া
- শরীর ফুলে যাওয়া (বিশেষ করে পা ও মুখমণ্ডলে)
- বমি বমি ভাব বা বমি
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
✔ পর্যাপ্ত জল গ্রহণ:
সার্জারির আগে ও পরে সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়া কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
✔ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ:
সার্জারির পরে কিডনি ফাংশনের রক্ত পরীক্ষা (Creatinine, BUN) করিয়ে নেয়া জরুরি।
✔ ওষুধ সতর্কতায় গ্রহণ:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
✔ ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা:
এই দুই রোগ কিডনির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। হার্ট সার্জারির পর এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
চিকিৎসকদের মতামত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা রহমান বলেন,
“হার্ট সার্জারির পর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অল্প বা মাঝারি মাত্রার কিডনি জটিলতা দেখা দেয়। তবে সঠিক নজরদারি ও যত্নের মাধ্যমে অধিকাংশ রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।“
উপসংহার
হার্ট সার্জারি জীবন রক্ষাকারী হলেও এর পরে কিডনি সমস্যার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সঠিক চিকিৎসা, পর্যাপ্ত নজরদারি ও রোগী ও পরিবারে সচেতনতা থাকলে এই জটিলতা সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। হার্ট এবং কিডনি — উভয়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজন সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ।