ডিম খেলে কি লম্বা হওয়া যায়? জানুন পুষ্টিবিদের পরামর্শ ও বৈজ্ঞানিক সত্যতা

শিশু-কিশোরদের লম্বা হওয়ার বিষয়টি সবসময়ই অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বিশ্বাস করেন, প্রতিদিন ডিম খাওয়ালে উচ্চতা দ্রুত বাড়ে। কিন্তু এই ধারণাটি কতটা সত্য? কেবলমাত্র ডিম খাওয়ার মাধ্যমে কি সত্যিই লম্বা হওয়া সম্ভব?


ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিম একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। একটি মাঝারি আকারের ডিমে পাওয়া যায়:

  • প্রোটিন: ৬-৭ গ্রাম
  • ভিটামিন: A, D, E, B2, B6, B12
  • মিনারেল: আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস
  • চর্বি: স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
  • কোলিন: মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক

এই উপাদানগুলো শরীরের গঠন, হাড়ের বৃদ্ধি ও কোষের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডিমের ভূমিকা

প্রোটিন এবং হাড়ের বৃদ্ধি

উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের প্রোটিন শরীরের কোষ, পেশী ও হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিশুদের দৈহিক বিকাশে প্রোটিন ঘাটতি হলে উচ্চতা প্রভাবিত হতে পারে।

ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি

ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে, যা উচ্চতা বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে।

হরমোন সক্রিয়করণে সহায়ক

ডিমে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও অন্যান্য উপাদান শরীরে গ্রোথ হরমোন (GH) উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে, যা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।


পুষ্টিবিদদের মতামত

পুষ্টিবিদ খাদিজা রহমান বলেন,
উচ্চতা বৃদ্ধিতে ডিম একটি সহায়ক খাদ্য। তবে শুধু ডিম খেয়েই লম্বা হওয়া সম্ভব নয়। এটি সুষম খাদ্যাভ্যাস জীবনধারার একটি অংশমাত্র।

ডা. আহসান হাবীব (পুষ্টি হরমোন বিশেষজ্ঞ) বলেন,
প্রতিদিন ২টি ডিম শিশুদের জন্য নিরাপদ উপকারী। তবে উচ্চতা নির্ভর করে বংশগতির উপর, যাকে সম্পূর্ণ খাদ্য দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। তবে স্বাস্থ্যকর ডায়েট হরমোন অ্যাকটিভেশন বাড়ায়।


কত বছর পর্যন্ত লম্বা হওয়া সম্ভব?

সাধারণত:

  • পুরুষ: ১৮–২১ বছর পর্যন্ত
  • নারী: ১৬–১৮ বছর পর্যন্ত
    এই বয়স পর্যন্ত গ্রোথ হরমোন কাজ করে। তাই এ সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অনুসরণ করলে উচ্চতা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

শুধুমাত্র ডিম খেলে কি লম্বা হওয়া সম্ভব?

না।
উচ্চতা বৃদ্ধিতে নিচের বিষয়গুলো একসঙ্গে কার্যকর ভূমিকা রাখে:
  1. সুষম খাদ্য: প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জিংক ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার
  2. নিয়মিত ব্যায়াম: সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, স্ট্রেচিং
  3. পর্যাপ্ত ঘুম: ৮–৯ ঘণ্টা ঘুম (গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের সময়)
  4. সূর্যের আলো: ভিটামিন ডি প্রাপ্তির জন্য

ভুল ধারণা ও বাস্তবতা

মিথ: শুধু ডিম খেলেই লম্বা হওয়া যাবে
সত্য: ডিম উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক, তবে এটি একক সমাধান নয়

মিথ: যত বেশি ডিম, তত বেশি উচ্চতা
সত্য: অতিরিক্ত ডিম খেলে পেটের সমস্যা, অ্যালার্জি বা কোলেস্টেরল বাড়তে পারে


শিশুদের জন্য পরামর্শ

  • প্রতিদিন ১–২টি ডিম খাওয়ানো নিরাপদ
  • সকালের নাস্তায় ডিম রাখা সবচেয়ে কার্যকর
  • শিশু যদি ডিম না খেতে চায়, তাহলে ডিম দিয়ে ভিন্ন রেসিপি তৈরি করুন (অমলেট, সিদ্ধ, ফ্রাইড রাইস)

উপসংহার

ডিম খাওয়া উচ্চতা বৃদ্ধিতে একটি সহায়ক খাদ্যাভ্যাস। এটি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ও ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা হাড় ও পেশীর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে শুধুমাত্র ডিমের ওপর নির্ভর করে উচ্চতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। বংশগত বৈশিষ্ট্য, খাদ্য, ব্যায়াম ও ঘুম—সব মিলিয়েই একটি শিশুর পূর্ণ বিকাশ হয়।

স্মার্ট টিপস:
“লম্বা হতে চাইলে শুধু খাওয়া নয়, সক্রিয় জীবনযাপনও জরুরি।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top