
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে বলা হয় “নীরব ঘাতক”। কারণ অনেক সময় এটি কোনো উপসর্গ ছাড়াই শরীরের ভেতরে ক্ষতি করতে থাকে। বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের উপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু রক্তচাপ কতটা বাড়লে সেটি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এবং কীভাবে বুঝবেন আপনি ঝুঁকিতে আছেন কি না? চলুন বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
স্বাভাবিক রক্তচাপ কত হওয়া উচিত?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে:
রক্তচাপের স্তর | সিস্টোলিক (উপরের চাপ) | ডায়াস্টোলিক (নিচের চাপ) |
স্বাভাবিক | ৯০-১২০ mmHg | ৬০-৮০ mmHg |
প্রি-হাইপারটেনশন | ১২০-১৩৯ mmHg | ৮০-৮৯ mmHg |
হাইপারটেনশন (পর্যায় ১) | ১৪০-১৫৯ mmHg | ৯০-৯৯ mmHg |
হাইপারটেনশন (পর্যায় ২) | ≥১৬০ mmHg | ≥১০০ mmHg |
রক্তচাপ কতটা বাড়লে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়?
- ১৪০/৯০ mmHg থেকে রক্তচাপ শুরু হলে তা হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
- ১৬০/১০০ mmHg বা তার বেশি হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২–৩ গুণ বেড়ে যায়।
- ১৮০/১১০ mmHg এর বেশি হলে তা Hypertensive Crisis হিসেবে গণ্য হয় — যা তাৎক্ষণিক হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক ঘটাতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়?
- অতিরিক্ত রক্তচাপ ধমনীর দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে।
- এতে রক্তনালির স্থায়ী ক্ষতি হয়, এবং plaque তৈরি হতে থাকে।
- একসময় এই plaque ফেটে গিয়ে হৃদপিন্ডে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় — যা হার্ট অ্যাটাক ঘটায়।
হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত (Warning Signs):
- বুকের মাঝখানে চেপে ধরা ব্যথা বা অস্বস্তি
- ঘাড়, কাঁধ, বা হাতে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- হঠাৎ ঘাম হওয়া, মাথা ঘোরা
- বমি ভাব বা পেটের অস্বস্তি
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (অত্যন্ত মারাত্মক সংকেত)
কে বেশি ঝুঁকিতে আছেন?
- যাদের বয়স ৪০ এর বেশি
- যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে
- ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল আছে
- ধূমপায়ী বা অ্যালকোহল গ্রহণকারী
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অনিয়মিত জীবনযাপন
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়:
✅ খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন:
- লবণ কম খান
- সবজি ও ফলমূল বেশি খান
- ট্রান্স ফ্যাট ও চর্বিজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
✅ নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
- সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম
✅ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করুন
- প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ করুন
- বার্ষিক হার্ট চেকআপ করান
উপসংহার:
উচ্চ রক্তচাপ কোনো উপসর্গ ছাড়াই হৃদযন্ত্রের উপর বিপজ্জনক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সচেতনতা বজায় রাখাই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। মনে রাখবেন, প্রতিদিন ৫ মিনিট সতর্ক থাকলেই আপনি হতে পারেন একটি সুস্থ হৃদয়ের অধিকারী।