
প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের জন্য এক ভয়ানক ও প্রাণঘাতী স্বাস্থ্যঝুঁকি। এটি ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ বোঝা যায় না বলে একে “নীরব ঘাতক” বলা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পুরুষদের ক্যানসার সংক্রান্ত মৃত্যুর একটি বড় কারণ এই প্রোস্টেট ক্যানসার। এই প্রতিবেদনে আমরা প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকির উপাদান, প্রতিরোধ, নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
📍 প্রোস্টেট ক্যানসার কী?
প্রোস্টেট ক্যানসার হলো পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থিতে সৃষ্টি হওয়া একধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যানসার। প্রোস্টেট গ্রন্থি মূত্রথলির নিচে অবস্থিত এবং বীর্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। যখন প্রোস্টেট কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন তা ক্যানসারে পরিণত হয়।
⚠️ প্রোস্টেট ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ প্রায় অনুপস্থিত থাকে, তবে সময়ের সাথে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
- প্রস্রাবে জটিলতা (ধীরগতি, ব্যথা, বারবার প্রস্রাবের চাপ)
- প্রস্রাবে রক্ত দেখা
- পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা বা অস্বস্তি
- যৌন সক্ষমতায় সমস্যা
- হাড়ে ব্যথা (ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে)
- অবসাদ ও ওজন হ্রাস
🔸 বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লক্ষণগুলো সবসময় প্রোস্টেট ক্যানসারের নির্দেশ দেয় না, তবে এগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
🧪 প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি
প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করতে নিচের কিছু টেস্ট ব্যবহার করা হয়:
- PSA (Prostate-Specific Antigen) টেস্ট: রক্তে PSA মাত্রা বেশি থাকলে ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
- ডিজিটাল রেক্টাল এক্সাম (DRE): চিকিৎসক আঙ্গুল দিয়ে প্রোস্টেট পরীক্ষা করেন।
- বায়োপসি: সন্দেহজনক কোষ পরীক্ষা করা হয়।
- MRI বা CT স্ক্যান: ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা বোঝার জন্য।
🧬 কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন?
প্রোস্টেট ক্যানসারের কিছু ঝুঁকি উপাদান রয়েছে:
- বয়স ৫০ এর ঊর্ধ্বে
- পারিবারিক ইতিহাসে প্রোস্টেট ক্যানসার থাকা
- উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ
- স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
- আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
💉 প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতি
রোগীর বয়স, ক্যানসারের স্তর এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়:
- সার্জারি (Prostatectomy): প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
- Radiation Therapy: ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে রেডিয়েশন ব্যবহার।
- Hormone Therapy: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে ক্যানসার কোষকে নিষ্ক্রিয় করা।
- Chemotherapy: ওষুধ প্রয়োগ করে কোষ ধ্বংস।
- Active Surveillance: ক্যানসার ধীরে বাড়ছে দেখে অপেক্ষা করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
🥦 প্রতিরোধ ও সচেতনতা
প্রোস্টেট ক্যানসার ১০০% প্রতিরোধযোগ্য না হলেও জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়:
- সবুজ শাকসবজি, টমেটো, রসুন বেশি খাওয়া
- রেড মিট ও চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া
- নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা (বিশেষত ৫০-এর পর)
🧠 মিথ ভাঙুন: সচেতন হোন
🔸 অনেকে মনে করেন, প্রোস্টেট ক্যানসার শুধু বয়সভিত্তিক রোগ। কিন্তু তরুণদের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।
🔸 “লজ্জার বিষয়” মনে করে অনেকে প্রস্রাবে সমস্যা লুকিয়ে রাখেন — যা বিপজ্জনক হতে পারে।
📌 উপসংহার
প্রোস্টেট ক্যানসার পুরুষদের জন্য একটি বাস্তব ও ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি হলেও সময়মতো শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সচেতনতা, নিয়মিত পরীক্ষা, ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই হতে পারে এই “নীরব ঘাতক” থেকে বাঁচার প্রথম পদক্ষেপ।