
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এক ফেসবুক পোস্টে দলের তিন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, দলের স্বার্থে এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ ঠিক রাখতে এই তিনজন উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
কোন প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য?
দলীয় ভেতরে নানাবিধ মতবিরোধ এবং সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি বারবার ভেস্তে যাওয়ার পটভূমিতেই ইশরাকের এই বিস্ফোরক মন্তব্য আসে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতা এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের হতাশা ক্রমেই বাড়ছে।
ফেসবুক পোস্টে কী বলেছেন ইশরাক হোসেন?
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইশরাক হোসেন লেখেন:
“দলের অভ্যন্তরে যারা সুপরিকল্পিতভাবে নেতাকর্মীদের উৎসাহ ভেঙে দিচ্ছেন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দিচ্ছেন—তাদের আর জায়গা থাকা উচিত নয়। দলের তিনজন উপদেষ্টা যদি নৈতিকতার জায়গা থেকে চিন্তা করেন, তবে তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সুসংগঠিত করতে হলে প্রথমেই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করছে এমন যে কারও বিরুদ্ধে এখনই অবস্থান নিতে হবে।”
তিনি কাদের উদ্দেশে কথা বলছেন?
যদিও ইশরাক হোসেন সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করেননি, তবে দলের ভেতরে গুঞ্জন রয়েছে—যেসব উপদেষ্টা অতীতে সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছিলেন, এবং যারা বর্তমান নেতাদের সিদ্ধান্তে বারবার হস্তক্ষেপ করছেন, তাদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
দলীয় প্রতিক্রিয়া কী?
বিএনপির কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, “ইশরাকের বক্তব্য দলীয় অভ্যন্তরীণ সমস্যারই প্রতিফলন। আমরা এ বিষয়ে শিগগিরই আলোচনা করব।”
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া কেমন?
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ ইশরাকের বক্তব্যকে সমর্থন করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন,
“যারা চেয়ার দখল করে বসে আছেন অথচ আন্দোলনে নামেন না, তাদের এখন বিদায় নেওয়া উচিত।” তারা মনে করেন, দলে যুব ও কর্মক্ষম নেতৃত্বের জায়গা তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী নূর রহমান বলেন: “ইশরাকের মতো তরুণ নেতারা যে সরাসরি অভ্যন্তরীণ নেতিবাচকতাকে চ্যালেঞ্জ করছেন, তা দলের সংস্কার প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত। তবে এটি দলীয় ঐক্যে প্রভাব ফেলতেও পারে যদি তা যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়।”
শেষ কথা
ইশরাক হোসেনের এই ফেসবুক পোস্ট শুধুই ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়—এটি দলের ভেতর জমে থাকা চাপ, হতাশা ও নেতৃত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করছেন অনেকে। বিএনপি যদি সত্যিই বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে চায়, তবে নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তরুণ নেতৃত্বের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর পথ।