গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভে বাসে অগ্নিসংযোগ

প্রতিনিধি, গাজীপুর | ১৪ এপ্রিল ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশু নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এই ঘটনায় এলাকায় বেশ কিছু সময় ধরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

দুর্ঘটনার বিবরণ

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি লোকাল বাস (রুট নাম্বার: ৪৫) একটি ৮ বছর বয়সী শিশুকে ধাক্কা দেয়। শিশুটি সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

নিহত শিশুটির নাম সিয়াম হোসেন, সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম আব্দুল মতিন, যিনি একজন কারখানা শ্রমিক।

উত্তেজিত জনতার প্রতিক্রিয়া

দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনতা দ্রুত জড়ো হয়ে পড়ে। চালক ও হেলপার বাসটি ফেলে পালিয়ে গেলে, বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিকে ঘিরে ফেলে এবং কিছু সময় পর আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আশপাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় যানজট।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান

খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ বাস চালক ও হেলপারকে খুঁজছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (টঙ্গী অঞ্চল) মুশফিকুর রহমান বলেন:

“এটি একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা। আমরা বাসচালক ও হেলপারকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

শিশুটির পরিবার প্রতিবেশীদের শোক

শিশুটির মৃত্যুর পর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মা রোকসানা বেগম বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। প্রতিবেশীরা জানান, সিয়াম ছিল খুবই প্রাণবন্ত ও ভদ্র। তার এই অকাল মৃত্যু সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

এক প্রতিবেশী বলেন:

“প্রতিদিন কত মানুষ রাস্তায় মরছে, কেউ বিচার পায় না। আজ সিয়াম গেল, কাল হয়তো আরেকজন যাবে।”

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনাটি গাজীপুরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে অনিরাপদ পথচারী চলাচল, অসচেতন চালনা, ও প্রতিনিয়ত শিশুদের ঝুঁকি–এসব নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সড়ক নিরাপত্তা সংগঠন নিরাপদ পথচলা-এর মুখপাত্র জানান,

“শিশুরা যখন নিজ দায়িত্বে স্কুলে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ দায়িত্ব। গাজীপুরের মতো শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে পথচারীদের চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।”


উপসংহার

একটি নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিক্ষোভ গাজীপুরের সড়কে এক গভীর প্রশ্ন রেখে গেল—আমাদের সড়ক কি শিশুদের জন্য নিরাপদ? বিক্ষোভে উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া সেই অনিরাপত্তা আর ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।

দ্রুত বিচার, সড়ক নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং মানুষের সচেতনতা না বাড়ালে এমন মৃত্যু ও বিক্ষোভের গল্প বারবারই লেখা হতে থাকবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top