
প্রতিবেদক | ঢাকা | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এক ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক বক্তব্যে জাতীয় প্রগতিশীল সংযুক্তি (এনসিপি)-র অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “যেভাবে ব্যবসায়ীরা বাংলা নববর্ষে হালখাতা করে পুরোনো দেনা মিটিয়ে নতুন খাতা খোলেন, সেভাবেই আমাদের রাষ্ট্রকেও প্রয়োজন একটি ‘হালখাতা‘ সংস্কার—পুরোনো শোষণ, দুর্নীতি ও অন্যায়ের হিসাব চুকিয়ে একটি নতুন শুদ্ধ খাতা খোলা।”
নাহিদ ইসলাম রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত ‘নববর্ষ, নব রাষ্ট্রচিন্তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন।
সভায় তিনি বলেন—
“এই রাষ্ট্রে এমন অনেক খাতায় আজও লেখা আছে গুম, বিচারহীনতা, রাজনৈতিক বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িকতা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের হিসাব। আমরা চাই সেই পুরোনো খাতা বন্ধ হোক। চাই নতুন এক রাষ্ট্র—যেখানে নাগরিক থাকবে কেন্দ্রে, রাষ্ট্র থাকবে জবাবদিহির মধ্যে।”
“হালখাতা মানে কেবল উৎসব নয়, দায়বোধের সুযোগ”
নাহিদ ইসলাম বলেন,
“ব্যবসায়ীরা হালখাতা করে পুরোনো দেনা মিটিয়ে দেন। তারা পুরোনো সম্পর্ক ঝেড়ে নতুন বিশ্বাসে ফিরে যান। রাষ্ট্র কি পারছে না সেই কাজটা করতে? ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যে শাসনব্যবস্থা চলে আসছে, তার কোথায় কোথায় দেনা জমেছে তা কি কেউ হিসাব রাখছে?”
তিনি উল্লেখ করেন,
“আমরা নতুন সংবিধান চাই না, কিন্তু বর্তমান সংবিধানকে জীবন্ত করে তুলতে চাই। যেখানে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রমিকের অধিকার ও পরিবেশগত ন্যায্যতা থাকবে শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে।”
যেসব ‘পুরোনো দেনা’ মেটানোর কথা বললেন তিনি
নাহিদ ইসলাম তাঁর বক্তব্যে রাষ্ট্রের কিছু ‘অপরিশোধিত দেনা’র তালিকা তুলে ধরেন, যার মধ্যে ছিল:
- ২০১৩-২৪ সময়কালে গুম-খুনের বিচার না হওয়া
- ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির দায়
- পোশাকশ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না পাওয়া
- জনগণের ওপর নজরদারি এবং বাকস্বাধীনতা সংকোচন
- পাহাড় ও আদিবাসী অঞ্চলগুলোর ওপর নিপীড়ন
- পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অবহেলা
তিনি বলেন,
“একটি রাষ্ট্র যদি নাগরিকের প্রতি ঋণী হয়ে পড়ে, তাহলে সেই ঋণ মেটানো রাষ্ট্রের কর্তব্য, করুণার বিষয় নয়।”
অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, অধিকারকর্মী ও তরুণ রাজনৈতিক কর্মীরা। অনেকেই ‘হালখাতা রাষ্ট্রচিন্তা’ ধারণাটিকে “গভীর কিন্তু সহজবোধ্য প্রতীকী ভাষা“ বলে অভিহিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শবনম হক বলেন:
“আমরা এতদিন রাষ্ট্রকে জটিলতা দিয়ে বিচার করেছি। আজকের বক্তব্য দেখালো, খুব সাধারণ উপমায়ও বড় রাজনীতি বলা যায়।”
এনসিপির অবস্থান
এনসিপি সম্প্রতি নিজেদের “বিকল্প রাজনৈতিক মঞ্চ“ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। তারা দাবি করছে, তাদের লক্ষ্য কেবল ক্ষমতা নয় একটি নতুন প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ সিদ্ধান্তে অংশ নেবে এবং রাষ্ট্র তাদের জবাব দেবে।
নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য সেই larger narrative-এর অংশ বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
উপসংহার: ‘রাষ্ট্রের খাতা নতুন করে লিখতে হবে’
নাহিদ ইসলামের ‘হালখাতা’ আহ্বান নিছক উৎসবের বক্তব্য নয় এ এক ধরনের প্রতীকী রাজনৈতিক চাপ রাষ্ট্রের প্রতি। যেখান থেকে উঠে আসে প্রশ্ন রাষ্ট্র কি পুরোনো অন্যায় মেটাবে? নাকি নতুন খাতা খুলবে পুরোনো ভুলের পাতাই রেখে?
যদি তা না হয়, তাহলে হয়তো জনগণ নিজেরাই একদিন নতুন খাতা খুলবে নিজের মতো করে, নিজের ভাষায়।