
প্রতিবেদক | ঢাকা | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
রাজধানীর রামপুরায় একটি কফিশপের সামনে এক তরুণীকে মারধরের ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কফিশপের ব্যবস্থাপকসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রামপুরার বাটার ফ্লাই মোড় এলাকায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় কফিশপের সামনে এক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে দোকানকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক তরুণীকে দোকানের বাইরে টেনে এনে ধাক্কা দেওয়া হয় এবং পরে মারধরের শিকার হন তিনি।
এ সময় আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশের হস্তক্ষেপ ও গ্রেপ্তার
খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে রামপুরা থানার একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কফিশপের ব্যবস্থাপক (নাম: মাহমুদুল হাসান, বয়স ৩২) এবং আরেক কর্মী (নাম: জাহিদুল ইসলাম, বয়স ২৬)-কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রামপুরা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান:
“সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী তরুণী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ভুক্তভোগীর বক্তব্য
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তিনি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে কফিশপে বসতে গেলে দোকানকর্মীরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এর প্রতিবাদ করতেই শুরু হয় উত্তেজনা। তিনি বলেন:
“তারা প্রথমে বাজে ভাষায় কথা বলছিল, পরে আমাদের বলল বাইরে যেতে। আমরা বের হচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ করেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে আমাকে মারধর করে। আমি চিৎকার করলে লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে দেখা যায় একাধিক ব্যক্তি মিলে তরুণীকে ধাক্কা দিচ্ছেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কফিশপটির বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন—
“যেখানে কফির কাপের আড়ালে নিরাপত্তা নেই, সেখানে সম্পর্ক নয়, সহিংসতা চেয়ে বসে!”
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিবৃতি
পরে কফিশপটির মালিকপক্ষ একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, “আমরা ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি আমাদের নীতির পরিপন্থী। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।”
তবে এ বিবৃতিকে ভণ্ডামিপূর্ণ ও দায়সারা মন্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
উপসংহার
রাজধানীর মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি জনপ্রিয় কফিশপের সামনে এমন ঘটনা কেবল আইনশৃঙ্খলা নয়, নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক শিষ্টাচার নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে প্রয়োজনে আরও ব্যক্তিকে আটক করা হতে পারে। ভুক্তভোগী তরুণী ইতিমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
এ ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।