মহাকাশে ইতিহাস: কেটি পেরিসহ ছয় নারী ফিরলেন ভিন্ন গ্রহের অভিজ্ঞতা নিয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৪ এপ্রিল ২০২৫

মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হলো। জনপ্রিয় মার্কিন পপতারকা কেটি পেরিসহ ছয়জন নারী সম্প্রতি সফলভাবে ঘুরে এলেন মহাকাশ থেকে, যা একটি অল-উইমেন স্পেস ট্যুরিজম মিশনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই ঐতিহাসিক যাত্রাটি সম্পন্ন হয় SpaceY নামক বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার উদ্যোগে। প্রায় তিন দিন মহাকাশে কাটিয়ে রোববার সন্ধ্যায় নিরাপদে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এই নারী দল।


কী ছিল এই অভিযানের বিশেষত্ব?

এই মিশনটি ছিল মহাকাশ পর্যটনের ইতিহাসে একটি পূর্ণাঙ্গ নারীদল নিয়ে পরিচালিত প্রথম সফল ভ্রমণ, যেখানে ছিল না কোনো পুরুষ সহচর বা কমান্ডার। এই ছয়জন নারীর প্রত্যেকেই এসেছিলেন ভিন্ন ভিন্ন পেশা, অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতি থেকে।

তাঁরা হলেন:

  1. কেটি পেরি – গায়িকা ও পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট
  2. ডঃ ইয়ানাহ মোসলে – ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট
  3. নাওমি টানাকা – জাপানি রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার
  4. আমিনা ইউসুফ – সোমালিয়ান পরিবেশ আন্দোলনকারী
  5. অ্যাঞ্জেলা স্মিথ – আমেরিকান সাবেক পাইলট
  6. লোরেন গার্সিয়া – মেক্সিকান বিজ্ঞান লেখিকা

মিশনের সময়কাল ভ্রমণের বিবরণ

এই মহাকাশ যাত্রা শুরু হয় ১১ এপ্রিল ২০২৫-এ, SpaceY’s Unity X মডেলের মাধ্যমে। ভ্রমণটি ছিল Earth’s low orbit-এ, যার সময়কাল ছিল মোট ৭২ ঘণ্টা।

এই সময়ের মধ্যে তাঁরা:

  • মহাশূন্যে ভরশূন্য অবস্থায় জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা নেন
  • মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছবি তোলেন
  • কিছু মৌলিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালান (যেমন: পানির প্রবাহ, হাইড্রোপনিকস ইত্যাদি)
  • এবং মহাকাশে নারীদের নিরাপদ অবস্থান মানসিক চাপ বিষয়ক ডেটা সংগ্রহ করেন, যা ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে

কেটি পেরির অভিজ্ঞতা

অবতরণের পর এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে কেটি পেরি বলেন:

আমি চাঁদের গান গেয়েছি, এবার সত্যিই তার কাছাকাছি গিয়েছিলাম। মহাকাশ শুধু বিজ্ঞানীদের জন্য নয়এটি এখন স্বপ্ন দেখার সাহসীদের জন্যও। আমরা প্রমাণ করেছি, নারী মানেই সীমা নয়।

তিনি আরও জানান, মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা যা তাঁর পরিবেশকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব

স্পেসY জানায়, এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইনক্লুসিভ স্পেস এক্সপ্লোরেশন—যেখানে লিঙ্গ, পেশা বা অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা ছাড়াই মানুষ মহাকাশে যেতে পারবে।
তারা দাবি করেছে, ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহ বা চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের জন্য এই ধরনের বৈচিত্র্যময় দলে কাজ করার সক্ষমতা ও চ্যালেঞ্জ বুঝে নেওয়া জরুরি।


বিশ্বব্যাপী প্রশংসা

বিশ্বজুড়ে নারী অধিকারকর্মী, বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন। ইউএন উইমেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে:

“এই অভিযান বিশ্বজুড়ে নারীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক জগতে নারী অংশগ্রহণ এখন শুধু প্রয়োজন নয়, গর্বের বিষয়ও।”


পরবর্তী পরিকল্পনা

SpaceY জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তারা আরও দুটি অলউইমেন মিশন পরিচালনার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে একটি মিশনে চাঁদকে ঘিরে প্রদক্ষিণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


উপসংহার

এই নারী অভিযাত্রীরা প্রমাণ করেছেন, মহাকাশ আর শুধুই সাদা পোশাকের পুরুষ বিজ্ঞানীদের জায়গা নয়। এটি এখন সংগীতশিল্পী, শিক্ষক, পরিবেশকর্মী কিংবা স্বপ্নদেখা যে কোনো নারীর জন্যও উন্মুক্ত এক অপার সম্ভাবনার আকাশ।

এটি কেবল একটি যাত্রা নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতি একটি সাহসী বার্তা—আমরাও যেতে পারি, আমরাও আছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top